Thursday, March 27, 2008

বার্ড ফ্লু থেকে সতর্কতা

খামারকর্মীদের সতর্কতা:
পর্যন্ত সারা বিশ্বে এ ভাইরাসে প্রায় ২০০ মানুষ মারা গেছেএদের সবাই খামারকর্মীসে কারণে ভোক্তা নয়, খামারকর্মী ও আক্রান্ত খামারের মুরগি নিধনে নিয়োজিতদের বাড়তি সতর্ক থাকা দরকারদরকারি বেশভুষা ব্যবহার করতে হবেবিশেষ করে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, পায়ে প্লাস্টি গাম বুট ও অ্যাপ্রোন পরতে হবেশারীরিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খাওয়া যেতে পারেযারা জীবন্ত মুরগির বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত তাদেরও এসব পেশাক পরে থাকতে হবেখামারে জীব-নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবেশেডে প্রবেশের সময় ফুটপথে জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি রাখতে হবেএতে পা ধুয়ে খামারে প্রবেশ নিশ্চিত করা দরকারখামার ও জীবন্ত মুরগির দোকানের চারপাশে নিয়মিত ফরমালিন বা শক্তিশালী জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে কোনোভাবেই অতিথি পাখিদের সংস্পর্শে আসা যাবে না

প্রতিষেধক ওষুধ:
চীন ও ফ্রান্সসহ অনেক দেশই মুরগির এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য লাইভ ভ্যাকসিন আবিষ্ককার করেছেচীনের স্টেট মিডিয়া জানায়, অরবিন রিসার্স ইনস্টিটিউট বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে চার বছর গবেষণা করে লভি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছেএই ভ্যাকসিন বার্ড ফ্লু ভাইরাসসহ রানিক্ষেত রোগের বিরুদ্ধে কাজ করবে
খামারের মুরগিদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারেবার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি ও কবুতরসহ কোনো পাখিরই কোনো চিকিৎসা নেইউন্নত বিশ্বে এ রোগের টিকা দেওয়ার প্রথা চালু থাকলেও আমাদের দেশে এখনো এ টিকা আমদানি করার অনুমতি নেইদীর্ঘমেয়াদি রোগপ্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে

রান্না মাংস-ডিমে ভয় নেই:
এই ভাইরাসে ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেইবিশিষ্ট পশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনজুর আজিজ বলেন, "আমরা যে তাপে মুরগির মাংস রান্না করি সেই তাপে কোনো জীবাণু বাঁচে না
তা ছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত মুরগি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায় বাজার থেকে তাজা, সবল জীবন্ত মুরগি কিনলে তা পুরোপুরি নিরাপদআক্রান্ত মুরগি বাজার পর্যন্ত আনতে আনতে তাজা থাকবে নাতবে বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে অল্প সেদ্ধ মাংস বা ডিম না খাওয়াই ভালোএ ছাড়া রান্নার আগে মাংস কাটার পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।"
খামারকর্মীদের শেডে কাজ করার সময় মাস্ক পরে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবেথুতু ফেলা যাবে নাকাজ শেষে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ও পা ভালো করে ধুয়ে ফেলা দরকার

জীব-নিরাপত্তা জোরদারের বিকল্প নেই:
বায়ো সিকিউরিটি বা জীব-নিরাপত্তা একটি সাধারণ জ্ঞানএক কথায় জীব নিরাপত্তা হলো খামারের মুরগি ও খামারকর্মীদের রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখা জীব-নিরাপত্তা নিতে অতিরিক্ত কোনো খরচ হয় নাএটি মূলত আচরণবিধিএর ফলে রোগজীবাণু থেকে খামার রক্ষা পাবে এবং হাঁস-মুরগি রোগজীবাণু থেকে মুক্ত থাকবে
খামারের হাঁস-মুরগি সব সময় ভালো জায়গায় রাখতে হবেভালো জায়গা হলো পরিষ্ককার পানি ও খাবারের ব্যবস্থা আছে এমন জায়গা; যেখানে নিয়মিত টিকা ও ওষুধপথ্যের ব্যবস্থাও আছেহাঁস-মুরগি সব সময় সংরক্ষিত ঘেরা জায়গায় রাখতে হবে
খামারে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে হবেদর্শনার্থীদের জুতা-স্যান্ডেল, ছাগল, ভেড়া, বন্য পাখি রিকশাভ্যান ও মোটর গাড়ির মাধ্যমে আক্রান্ত এক এলাকা থেকে অন্য এলাকার খামারে রোগ ছড়াতে পারেসে জন্য দর্শনার্থীদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখতে হবে

পাশের খামারে যদি রোগ দেখা দেয়:
পাশের খামারে এই রোগ দেখা দিলে বুঝতে হবে, আপনার খামার এখন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছেমনে রাখতে হবে, আপনার খামারটিও আক্রান্ত হতে পারেতবে এ সময় অধৈর্য না হয়ে ঠান্ডা মাথায় কতগুলো মৌলিক নীতি অবলম্বন করতে হবে
খামারের হাঁস-মুরগির জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবেনতুর হাঁস-মুরগি কিনবেন নাবহিরাগতদের কোনোভাবেই খামার শেডের কাছে আসতে দেওয়া যাবে না খামারের আশপাশ, শেড, শেডের প্রত্যেকটি যন্ত্রপাতি এমনকি সাইকেল, মোটরসাইকেল নিয়মিত পরিষ্ককার রাখতে হবেখামারের বর্জ্য ও বিষ্ঠা সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে হবে

যদি মড়ক লাগে:
খামারে মুরগির মৃত্যু বা মড়ক অনেক সময়ই হয় ও হতে পারেযে কারণেই মড়ক লাগুক না কেন, দ্রুত নিকটস্থ পশুসম্পদ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবেমনে রাখবেন, চোখে দেখে কোনোভাবেই বোঝা যাবে না মৃত্যুর কারণ বার্ড ফ্লু ভাইরাস কি নারোগের কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই ল্যাবরেটরি টেস্ট করাতে হবেপাশুসম্পদ হাসপাতালের চিকিৎসক নির্দিষ্ট ল্যাবরেটরিতে রক্তের নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর আপনাকে নিশ্চিত করবেন রোগের কারণ কীযদি বার্ড ফ্লু ভাইরাস পাওয়া যায়, তাহলে নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে খামারের মুরগি নিধন ও ডিম নষ্ট করতে হবে এবং খামারের বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলতে হবে

করণীয়:

*
মুরগির মাংস ও ডিম ভালোভাবে রান্না ও সেদ্ধ করে খেতে হবে
*
খাওয়ার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন
*
ডিম ফ্রিজে রাখার আগে হালকা গরম পানি বা ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানিতে ধুয়ে রাখতে হবে
*
বাড়ির হাঁস-মুরগি খাঁচায় ভরে রাখুন বা কোনো নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না
*
খামারে কাজ করার সময় মাস্ক, গ্লাভস বা দস্তানা এবং অ্যাপ্রোন পরে কাজ করতে হবে
*
খামারের ফুটপথে পা ধুয়ে প্রবেশ করুন
*
হঠাৎ জাবর কাশি, গলার স্বর ভেঙে গেলে, চোখে কোনো সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

অনুচিত:

*
অতিথি পাখিদের শিকার ও খাওয়া যাবে না
*
মুরগি কাটার ছুরি, বঁটি ও মাংস রাখার পাত্র গরম পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে রাখতে হবে
*
জীবন্ত মুরগি ছাড়া কোনো রোগগ্রস্ত মুরগি, হাঁস, কবুতর কেনা বা খাওয়া যাবে না
*
খামার শেড থেকে শিশুদের দুরে রাখতে হবে
*
খামারের অসুস্থ মুরগি খাওয়া যাবে না
*
গুজব বিশ্বাস করা যাবে না

তথ্য নেয়া হয়েছে নিসর্গ ব্লগ থেকে। লিঙ্ক নং - ১ এবং লিঙ্ক নং - ২

0 comments:

Post a Comment

http://bdbird.blogspot.com