Wednesday, May 14, 2008

রসিক ডাকাত কানাকোকা

রসিক ডাকাত কানাকোকা

ইফতেখার মাহমুদ

সাপ, বেজি ও গুইসাপ দেখলে লেজে ঠোকর দিয়ে পালিয়ে যায়। পিছু নেয়। কিছুদূর গিয়ে আবার ঠোকর দেয়। এভাবে প্রাণীগুলোকে বিরক্তকরে মজা পায়। এই স্বভাবের কারণে কানাকোকাকে রসিক পাখি নামে ডাকে অনেকে। তবেঅন্য পাখির বাসায় হানা দিয়ে বাচ্চা ও ডিম খাওয়ার অভ্যাস থাকায় কেউ কেউ কানাকোকাকে 'ডাকাত' পাখি নামেও ডাকে। সাপ-ব্যাঙ ও কীটপতঙ্গের সংখ্যা বেড়ে গেলে তা খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক করে বলে একে 'পরিবেশবান্ধব পাখি'ও বলা হয়।

কাক গোত্রের তুখোড় শিকারি পাখি কানাকোকা। নিজে আড়ালে থাকতে পছন্দ করে অন্য পাখিরাও এর কাছ থেকে নিজেদের বাচ্চা ও ডিম লুকিয়ে রাখে। কানাকোকার চোখের মণি ও ডানা দুটি বাদামি। শরীরের বাকি অংশ কুচকুচে কালো। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর, ফেনী ও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি স্থানে এই পাখি দেখা গেছে। এদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির কানাকোকাটি সারা দেশে দেখা গেলেও ছোটটি শুধু পাহাড়ি এলাকায় থাকে। কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে উঁচু ও পাহাড়ি এলাকা থাকায় এদের প্রচুর দেখা মিলত। বসবাসের পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় এবং মানুষের শিকারের কারণে এদের সংখ্যা কমছে।

১১ মার্চ কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে ছোটটি ও চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী চরে বড় কানাকোকার দেখা মিলেছে। ঝোপের আড়ালে থাকা শরীরের কিছুটা অংশ দেখে পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান নিশ্চিত করলের, সেখানে কানাকোকা আছে। চৌদ্দগ্রাম ও ইছাখালীর চর দুই জায়গাতেই পাখিটিকে আড়ালে লুকিয়ে থাকতে দেখা গেল।

লাফিয়ে লাফিয়ে চলছিল। স্বভাবের ক্ষিপ্রতা যেন অবয়বে ধরা পড়ছিল। শিকার খোঁজার ভঙ্গিতে চলাফেরা, তাই অন্য পাখির ভিড় নেই আশেপাশে। আমাদের দেখে ঝোপের আড়ালে চলে গেল। যেন অপরাধ করে গা ঢাকা দিচ্ছে।

শরীফ খান বললেন, আত্মগোপন করে থাকা এর স্বভাব। অন্য পাখি ও প্রাণীর বাচ্চাদের ওপর হামলা করলেও নিজের বংশধরের ব্যাপারে খুব সচেতন এরা। তাই নারিকেলসহ উঁচু গাছের বাসা বাঁধে। বাচ্চাদের সেখানেই নিরাপদে রাখে।

পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখতে এর তুলনা নেই। ঝোপঝাড়ে গিয়ে নানা ধরনের পোকা, ব্যাঙ, ছোট সাপসহ নানা ধরনের কীটপতঙ্গ ধরে খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখে এরা। এদের কারণে প্রাণচক্র ঠিক থকে বলে জানান প্রাণিবিজ্ঞানী মহসিনুজ্জামান চৌধুরী

কাঠবিড়ালীর বাচ্চা এদের প্রিয় খাবার। তবে ছোট সাপ, ব্যাঙ, গিরিগিটি, অন্য ছোট পাখির ডিম, বাচ্চাও খায় এরা। কেঁচো ধরে এনে বাচ্চার সামনে দেয়। নিজের বাচ্চাদের খাবার ধরার প্রশিক্ষণও দেয় এরা। ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশের শ্রীপুর গ্রামে এই খাবার বেশি মেলে। তাই এই গ্রামে কানাকোকার আনাগোনা বেশি বলে জানায় গ্রামবাসী।

গ্রামবাসী জানায়, এই পাখি প্রহরে প্রহরে ডাকে। জোয়ার-ভাটার সময় এদের ডাক সংকেতের মতো কাজে লাগে। স্থানীয় প্রবীণেরা জানান, কানাকোকার ডাক শুনে তাঁরা প্রকৃতির নানা পরিবর্তন বুঝতে পারেন। কিন্তু মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পাখির সংখ্যা কমে আসছে।

কানাকোকা নিয়ে গ্রামে প্রচলিত মত, এর মাংস জবাই করে খেলে রাতকানা রোগ ভালো হয়ে যায়। বাতসহ নানা ধরনের রোগও ভালো হয় এতে।

প্রাণিবিজ্ঞানী মহসিনুজ্জামান মনে করেন, এটা সম্পূর্ণভাবেই কুসংস্কার। কানাকোকার শরীরে এমন কোনো উপাদান নেই, যাতে রাতকানাসহ বিভিন্ন রোগ ভালো হবে। বরং এ ধরনের চর্চার কারণে কানাকোকার সংখ্যা কমে আসছে।

প্রথম আলো, ১ এপ্রিল, ২০০৮

0 comments:

Post a Comment

http://bdbird.blogspot.com