Tuesday, May 27, 2008

ওরা হারিয়ে যাচ্ছে

সীমান্ত দীপু

শকুন প্রায় সবাই চেনেন। তবে এখন এদের দেখা পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। সত্তরের দশক পর্যন্ত এদেশে শকুনের দল সহজেই চোখে পড়ত। নব্বইয়ের গোড়ায় দেখেছি, মরা গরু খেতে শকুনের দল কোথা থেকে যেন হাজির হয়! ভাগাড়ে শকুন আর কাকের চেঁচামেচিতে গ্রামের লোকের ভিড় জমে যেত। লোকমুখে শোনা যায়, গরু মারা গেলে দূরদেশে কাক যায় শকুনকে খবর দিতে। আর ফেরার সময় ছোট্ট কাক দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে না পেরে শকুনের পিঠে চড়ে বসে। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। আসলে শকুন আকাশের অনেক উঁচুতে উঠে ডানা মেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উড়তে থাকে। এদের দৃষ্টিশক্তি এতই প্রখর যে, মাটিতে অথবা পানিতে ভেসে থাকা যে কোনো মরা জন্তু সহজেই দেখতে পায়। তবে শকুনের ঘ্রাণশক্তি নেই।

বাংলাদেশে ৫ প্রজাতির শকুনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বাংলা শকুন। এদের বৈজ্ঞানিক নাম জেপস বেঙ্গালেনসিস। এদেশে বেশি দেখা যেত বলেই ওদের নামের শেষে বাংলা শব্দটি চলে এসেছে। এখন গোটা পৃথিবীতেই এদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সংখ্যায় দশ হাজারের বেশি হবে না। বাংলাদেশেও বাংলা শকুন এখন বিরল প্রজাতি। সব মিলে এদেশেও এদের সংখ্যা ২০০’র বেশি হবে না। তা-ও আবার বেশিরভাগই দেখা যায় সুন্দরবন এলাকায়। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় একসময় শকুন দেখা যেত। এখনো দু’একটি দেখা যায় চিড়িয়াখানার আশপাশে।
গত মাসে হবিগঞ্জের আদিত্যপুর গ্রামে পাখি দেখতে গিয়ে চোখে পড়ে ২০টি শকুনের একটি দল। বহু পুরনো একটি আম গাছে একজোড়া শকুন বাসাও বেঁধেছে। গাছটি প্রায় শতবর্ষী বলেই এখানে ওরা আস্তানা গেড়েছে। একই এলাকায় আরো দুটি বাসার দেখা মেলে। বাসাটি অগোছালো হলেও দুটি শকুন যুগল পরম মমতায় বাসা দুটিকে আগলে রেখেছে। গ্রামের লোকজনের মধ্যেও ওদের নিয়ে দারুণ কৌতূহল দেখলাম। আমাদের দেশে শকুনের এরকম বাসা আছে বলে আমার জানা নেই। এদেশ থেকে শকুন হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো প্রজননের জন্য আবাসস্থলের অভাব। এরা সাধারণত বট, শিমুল, দেবদারু, তালসহ বড় বড় দেশি গাছে বাসা বাঁধে। কিন্তু এসব দেশি গাছের আজ বড়ই অভাব। স্ত্রী শকুন বছরে মাত্র একবার একটিমাত্র ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটায়। কোনো কোনো সময় দুটি ডিমও দিতে পারে। ফলে এদের বংশবৃদ্ধির হারও খুবই কম। বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণেও অনেক সময় এদের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশসহ পুরো এশিয়ার গবাদিপশুকে ‘ডাইক্লোফেনাক’ নামের ওষুধ সেবন করানো হয়। গরু মারা যাওয়ার পরও এর কিছু কার্যক্ষমতা বজায় থাকে। মরা গরু খেলে ওষুধের ক্রিয়ায় শকুনের মৃত্যু হয়। বর্তমান সময়ে গরু মারা যায় কম বা গেলেও পুঁতে ফেলা হয়। ফলে দিন দিন এদের খাবারপ্রাপ্তি কমে এসেছে এবং এর ফলে ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে প্রায় ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ বাংলা শকুন।

পরিবেশের জন্য শকুন খুবই উপকারী একটি পাখি। হবিগঞ্জে এদের বাসা দেখতে পাওয়া খুবই আশার কথা। ভারতে শকুনের ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশ থেকে আগামী দশ বছরের মধ্যে সব শকুন হারিয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। কাজেই শকুনকে হারিয়ে ফেলার আগেই আমাদের সচেতন হতে হবে। বাড়াতে হবে এদের প্রজননক্ষেত্র অথবা ক্যাপটিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এদের সংখ্যা বাড়িয়ে ছেড়ে দিতে হবে পরিবেশে।
তথ্য: সমকাল, ২৭ মে ২০০৮

1 comments:

Malay Roy Choudhury said...

ঢাকার ধানমন্ডি থেকে 'মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকার' একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল কেবল বাংলাদেশের পাখি নিয়ে । সেই সংখ্যাটি সংগ্রহ করে তার যাবতীয় খবর এই সাইটে দিলে উপকার হয় ।

Post a Comment

http://bdbird.blogspot.com