Tuesday, January 6, 2009

পাখির কলতানে মুখর হাইল হাওর

বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হাইল হাওর এখন হাজারো পাখির কলতানে মুখর। শীতের আগমনে হাওরের বিভিন্ন বিলে দেশীয় পাখির সঙ্গে যোগ দিয়েছে অতিথি পাখি।
হাইল হাওরের বিভিন্ন বিল ঘুরে হাওরের জলরাশির বুকে কিংবা কচুরিপানাসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ, লতাগুল্মের আড়ালে ঝাঁকে ঝাঁকে দেশি-বিদেশি পাখি দেখা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে ‘বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমে’।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং ইউএসএইডের তত্ত্বাবধানে গঠিত সমন্বিত সংরক্ষিত এলাকা সহব্যবস্থাপনা প্রকল্প (ইন্টিগ্রেটেড প্রটেকটেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্ট− আইপ্যাক) সুত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে বাইক্কা বিলে পাখি শিকারিদের উপদ্রব না থাকায় এবং জলজ উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় এ বিলে দেশীয় পাখিরা স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছে।
আইপ্যাকের কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সদ্যসমাপ্ত মাচ্ প্রকল্পের (ম্যানেজম্যান্ট অব অ্যাকুয়াটিক ইকোসিস্টেম থ্রু কমিউনিটি হাজবেন্ডারি) নজরদারির ফলে হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে পাখি শিকারিদের অপতৎপরতা বন্ধ হয়েছে। এ কারণে ওই বিলে দেশি পাখিরা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে। বিলে অতিথি পাখির আগমনও বেড়ে চলেছে। হাওরে এখন যেসব পাখি দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে রয়েছে মেটো রাজহাঁস, গিরিয়া হাঁস ও ল্যাঞ্জা হাঁস, মরচেরং ভুতিহাঁস, পাতি সরালি ও রাজ সরালি। এ ছাড়া দেশীয় পাখির মধ্যে রয়েছে পানকৌড়ি, কানিবক, ধলাবক, গোবক, ধুপনিবক, রাঙ্গাবক, দলপিপি, নেউপিপি, বেগুনিকালেম, কালামাথা কাস্তেচরা, বালিহাঁস, পলাসী কুড়া ইগল ও শঙ্খচিল।
হাওরপারের বাসিন্দারা জানায়, নভেম্বরের শুরু থেকেই হাইল হাওরে দেশীয় পাখির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে অতিথি পাখি। হাওরে পাখির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিকারিদের তৎপরতাও বেড়েছে। শিকারিরা রাতের আঁধারে হাওরের বিভিন্ন বিলে জালের ফাঁদ পেতে রাখে। ভোরে ফাঁদে আটকানো পাখিগুলো এসে নিয়ে যায়। এসব পাখি মৌলভীবাজার জেলা সদরের পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে এবং সিলেটের বিভিন্ন হোটেলে বিক্রি করা হয়।
বাইক্কা বিলের প্রহরী আলাই মিয়া ও আদর উদ্দিন শিকারিদের তৎপরতা প্রসঙ্গে বলেন, শিকারিরা মাঝেমধ্যে বাইক্কা বিলেও ফাঁদ পাতার চেষ্টা করে। রাতে নৌকা নিয়ে তাদের ধাওয়া করতে হয়। এ বছর শিকারির তৎপরতাও বেশি।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সহিদ উল্ল্যাহ্ বলেন, সংবাদ পেলে পুলিশ শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। গত ১৩ ডিসেম্বর হাওরের উত্তর উত্তসুর অংশে শিকারিদের পাতা ৫৭টি জাল পুলিশ জব্দ করে পুড়িয়েছে।

প্রথম আলো, ৭ জানুয়ারি, ২০০৮

0 comments:

Post a Comment

http://bdbird.blogspot.com